উন্নত চিকিৎসার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়ার তারিখ আবারও পেছানো হয়েছে। কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হওয়া এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দুই কারণেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন যাত্রা তৃতীয় বারের মতো পেছানো হয়েছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে সম্ভাব্য যাত্রার তারিখ হিসেবে ৭ ডিসেম্বর (রোববার) বলা হলেও রাতে জানানো হয়, তা পরিবর্তন করে ৯ ডিসেম্বর করা হয়েছে। তবে এই তারিখও চূড়ান্ত নয়। চিকিৎসকদের পরামর্শ ও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে সময় আরও পেছাতে পারে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তার শারীরিক অবস্থায় বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় যাত্রার পরিকল্পনা সাময়িকভাবে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে তার অবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই।
জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবি এম আব্দুস সাত্তার গণমাধ্যমকে বলেন, “ম্যাডামের লন্ডন যাত্রা পিছিয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো তারিখ বলতে পারছি না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার পরে যে কোনো দিনই উনাকে নেওয়া হবে।”
বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে কাতারের ব্যবস্থাপনায় নতুন করে যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, সেটি আজ (৬ ডিসেম্বর) ঢাকায় অবতরণের কথা থাকলেও পরে সময়সূচিও পুনর্নির্ধারণ করে আগামী ৯ ডিসেম্বর করা হয়েছে। সেটি ঢাকা থেকে ১০ ডিসেম্বর ছেড়ে যাওয়ার প্রাথমিক সময় সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে সেটি পাঠানো সম্ভব হয়নি। ফলে বিকল্প হিসেবে জার্মানির এফএআই রেন্ট-এ-জেট প্রতিষ্ঠানের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে কাতার সরকার।
ঢাকায় কাতার দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকায় কাতার দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুর রহমান আসাদ গণমাধ্যমকে বলেন, কাতার সরকার জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকায় পাঠাচ্ছে। চিকিৎসক এবং বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সময় সমন্বয় করে ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছাবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে যাত্রাকারী দলের সংখ্যা কমানো হবে।
বিএনপি শুরুতে ১৮ জনের তালিকা করলেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে সীমিত সংখ্যক মানুষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ভ্রমণ করবেন। বাকি ব্যক্তিরা প্রয়োজন হলে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যাবেন।
এদিকে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান শুক্রবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান। তিনি বিমানবন্দর থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে শাশুড়ির সঙ্গেই সময় কাটান। সেখানে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় থাকার পর ধানমন্ডিতে পৈতৃক বাসায় যান তিনি। রাতে আবার হাসপাতালে ফিরে এসে অবস্থার খোঁজখবর নেন। তিনি আগে থেকেই চিকিৎসক দলের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরেই লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস এবং চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। ১৩ দিন ধরে তিনি সেখানেই ভর্তি আছেন। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় হাসপাতালের সিসিইউতে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।